ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড” উপন্যাসের ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল ৬৩২ এএফ এর সময় অর্থাৎ বিখ্যাত শিল্পপতি হেনরী ফোর্ড এর টি মডেলের গাড়িটি উদ্ভাবনের তারিখকে সময় গননার শুরু ধরলে তার ৬৩২ বছর পরের এক সময়ের পৃথিবীতে। সে সময় পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কিছু নির্দিষ্ট ব্যাক্তির হাতে ছিল যারা সমাজের মানুষকে কয়েকটি (৫টি) সামাজিক শ্রেণীতে বিভক্ত করে নেন। আলফা আর বেটা শ্রেণীর মানুষেরা ছিল সমাজের নিয়ন্ত্রক – এদের মাঝে ছিল বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ কর্তা ব্যাক্তিরা। আর গামা, ডেলটা, এফসিলন এরা ছিল তাদের কল কারখানায় কাজ করা খেটে খাওয়া মজুর শ্রেণীর লোক। নিচের শ্রেণীর লোকদের সোমা নামক একটি ঔষধ প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রন করা হত। এই ঔষধের কারনে কেউ কোন ব্যাথা বা দুঃখ-কষ্ট অনুভব করত না, বরং সবাই নিজেকে সুখি ভাবত। এছাড়া ছোট শিশুদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা ও পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ পরিচালকদের মন মত গড়ে তোলা হত।
ঘটনা প্রবাহের শুরু হয়েছিল সেন্ট্রাল লন্ডন হ্যাচারী এন্ড কন্ডিশনিং সেন্টারে। সেখানে হ্যাচারীর পরিচালক তার একজন সহকারিকে (হেনরি ফস্টার) নিয়ে একদল ছেলেকে হ্যাচারী ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল। তারা তখন বোকানভস্কি ও পডস্ন্যাপ প্রসেস সম্পর্কে শিখছিল। এই প্রক্রিয়ায় হ্যাচারী হাজার হাজার একই রকম ভ্রুণ তৈরী করতে সক্ষম ছিল। ভ্রুনগুলো গর্ভে থাকা অবস্থায়ই তাদেরকে বোতলে করে ফ্যাক্টরিতে তৈরী জিনিসের মত বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে ফেলা হয়। যারা আলফা শ্রেণীতে যায় তারা ভবিষ্যতে “ওয়ার্ল্ড স্টেট” এর নেতা ও বুদ্ধিজীবী হবে। এর পরের প্রতিটি শ্রেণীর ভ্রুণগুলোকে শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তার আগের শ্রেণীর থেকে কিছুটা দূর্বল করে তৈরী করা হয়। সবচেয়ে নিচের শ্রেণী এফসিলনকে অক্সিজেন বঞ্চিতকরণ ও রাসায়নিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করার করার জোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হয়। হ্যাচারীর একজন কর্মী লিনিয়া ক্রাউন বালকদেরকে বর্ণনা করে কিভাবে সে ভ্রুণগুলোকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় থাকার জন্যে টিকা দিচ্ছিল।
এরপর পরিচালক তাদেরকে হ্যাচারীর শিশুশালায় নিয়ে যায়। এখানে তারা কিছু ডেলটা শ্রেণীর শিশুদেরকে দেখতে পায়, যাদেরকে বই ও ফুল ঘৃণা করতে শিখানো হচ্ছিল। পরিচালক তাদের বললেন এই পদ্ধতি তাদেরকে নিরীহ ও অনুগত খাদকে পরিণত করবে। এরপর তিনি তাদেরকে ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট’ এর নীতিগুলো শেখানোর ‘হিপনোপ্যাডিক’ পদ্ধতির সম্পর্কে বললেন। যেখানে একটি কক্ষে শিশুরা ঘুমিয়ে থাকে আর একটি কন্ঠ তাদেরকে ফিসফিসিয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। এখানে সাধারণত প্রাথমিকভাবে তাদেরকে শ্রেণী সচেতনতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। এরপর তিনি তাদেরকে জানালা দিয়ে বাহিরে কিছু নগ্ন শিশুদেরকে দেখালেন যারা সেন্ট্রিফিউগাল বাম্বল পাপী(Centrifugal Bumble-Puppy) নামক একটি যৌণতাপূর্ণ খেলায় মত্ত ছিল।
এ পর্যায়ে মুস্তাফা মন্ড বালকদের কাছে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর দশ জন নিয়ন্ত্রকের একজন হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পর ওয়ার্ল্ড স্টেট এর ইতিহাস বর্ণনা করলেন। তারপর পৃথিবী থেকে সকল প্রকার আবেগ, ইচ্ছা ও মানবীয় অনুভূতি দূর করার ক্ষেত্রে তাদের সফলতার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। ওয়ার্ল্ড স্টেট এর মটো তিনটি – কমিউনিটি, আইডেনটিটি ও স্ট্যাবিলিটি। এই সময় লেনিনা হ্যাচারীর বাথরুমে হেনরি ফস্টার ও তার সম্পর্ক নিয়ে ফ্যানি ক্রাউনের সাথে কথা বলছিলেন। ফ্যানি তাকে হেনরি ফস্টারের সাথে ৪ মাসের সম্পর্ক নিয়ে তিরস্কার করল। তখন লেনিনা বার্নার্ড মার্ক্স এর প্রতি তার আকর্ষনের কথা স্বীকার করল। এদিকে হ্যাচারির অন্য এক জায়গায় হেনরী ও আর একজন সহকারী প্রিডেসটিনেটরের লেনিনাকে ভোগ করার বিষয়ে কথোপকথন শুনে বার্নার্ড মার্ক্স রাগে ফুসছিল।
কাজ শেষে লেনিনা বার্নার্ড মার্ক্সকে জানালো নিউ মেক্সিকোতে “স্যাভেজ রিজার্ভেশন” তার সাথে যেতে পারলে সে খুব খুশি হবে। বার্নার্ড এতে কিছুটা বিব্রত আবার খুব আনন্দিত হল। তার বন্ধু হেমহোলজ (Helmholtz Watson) এর সাথে দেখা করার জন্যে একটি হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা দিল। সে আর তার বন্ধু “ওয়ার্ল্ড স্টেট” এর ব্যাপারে তাদের অসন্তুস্টি ও ক্ষোভ নিয়ে আলোচনা করল। প্রথমে বার্নার্ডই তার রাগ প্রকাশ করল কারন জাতের দিক দিয়ে সে ছিল একেবারে নিচু শ্রেণীর এবং শারীরিক আকৃতির দিক দিয়ে সে ছিল খুব ছোট। হেমহোলজ এর অসন্তুষ্টির কারন হল তাকে সম্মোহনী ভাষা লিখতে বলা হয়েছিল, যেটি ছিল তার বুদ্ধিমত্তার স্তরের তুলনায় নিচু স্তরের কাজ। কয়েকদিন পরে বার্নার্ড তার উর্ধঃতন কর্মকর্তার কাছে “স্যাভেজ রিজার্ভেশন” এ যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করল। পরিচালক তাকে ২০ বছর আগে একজন মহিলাকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার একটি ঘটনা বলল। ঝড়ের মাঝে সে তাকে হারিয়ে ফেলে পরে তাকে আর খুজে পায়নি।
অবশেষে সে তাকে স্যাভেজ রিজার্ভেশনে (আদিম মানুষের সংগ্রহশালা) যেতে অনুমতি দিলে সে আর লেনিনা সেখানে যাত্রা করে। যাত্রার পূর্বে সে হেমহোলজ এর সাথে দেখা করে ও জানতে পারে যে পরিচালক তার কঠিন ও অসামাজিক ব্যবহারে তার প্রতি বিরক্ত ও তাকে আইসল্যান্ডে নির্বাসিত করার পরিকল্পনা করেছেন। রাগে ক্ষুব্ধ হয়ে বার্নার্ড রিজার্ভেশনের দিকে যাত্রা করে। আদিম মানুষের সংগ্রহশালায় গিয়ে সে আর লেনিনা সেখানকার বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ অধিবাসীদের দেখে বিস্মিত হল। কারন ওয়ার্ল্ড স্টেট এর কোন ব্যাক্তির মাঝেই বার্ধক্যের কোন চিহ্ন দেখা যেত না। তারা একটি ধর্মীয় রীতির বাস্তবায়ন দেখল যেখানে কোন একটি জঘন্য খারাপ কাজের জন্যে একজন যুবককে চাবুক দিয়ে মারা হচ্ছিল। এই ঘটনার পর তাদের সাথে একজন ফর্সা চামড়ার যুবকের সাথে দেখা হল যে গ্রামের অন্যদের থেকে আলাদাভাবে একাকী অবস্থান করছিল। পিতৃ পরিচয় জানতে চাইলে জন তার পরিচয় হিসেবে বলল তার মায়ের নাম হল লিন্ডা যাকে ২০ বছর আগে গ্রামবাসী উদ্ধার করেছিল। বার্নার্ড বুঝতে পারল, পরিচালক যে নারীর কথা বলেছিলো, জনের মা লিন্ডাই হল সেই মহিলা। জনের সাথে কথা বলে সে জানতে পারল লিন্ডাকে গ্রামবাসী একঘরে করে রেখেছে, কারন সে গ্রামের সকল পুরুষের সাথেই ঘুমাতে ইচ্ছুক। একারনেই জন গ্রামবাসীদের থেকে আলাদা হয়ে গ্রামের বাহিরে একাকী জীবনযাপন করছে। সে তাকে আরো জানায় সে বই পড়া শিখেছে দুটি বই থেকে যার একটি হল “কেমিক্যাল বন্ড ও ব্যাকটেরিওলজিক্যাল কন্ডিশনিং অফ এমব্রয়ো” এবং অন্যটি হল “দ্যা কমপ্লিট ওয়ার্কস অফ শেক্সপিয়র”। ২য় বইটি পোপ নামক লিন্ডার এক প্রেমিক লিন্ডাকে দিয়েছে। জন তখন বার্নার্ডকে বলে সে তার গ্রামের বাহিরে যে আরেকটি পৃথিবী আছে অর্থাৎ “ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড” দেখতে ইচ্ছুক। এই ব্যাপারে সে তার মায়ের কাছে অনেক গল্প শুনেছে। বার্নার্ড তাকে ওয়ার্ল্ড স্টেটে আসার আহবান করল। জন রাজি হল তবে সে তার মা লিন্ডাকে সাথে নেয়ার জন্যে পিড়াপিড়ি করল।
এদিকে রিজার্ভেশনে থেকে লেনিনা একেবারে বীতশ্রুদ্ধ হয়ে বেশি পরিমানে সোমা গ্রহন করে, ফলে সে প্রায় ১৮ ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে থাকে। বার্নার্ড সান্তা ফিতে উড়ে গিয়ে মুস্তাফা মন্ড এর সাথে দেখা করে জন ও লিন্ডাকে ওয়ার্ল্ড স্টেট এ নিয়ে আসার জন্যে অনুমতি নেয়। জন এ সময় অজ্ঞান লেনিনার ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করে ও তাকে স্পর্শ করার ইচ্ছাটা পূরণ করে। জন, লিন্ডা, বার্নার্ড ও লেনিনা বিমানে করে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর দিকে যাত্রা করে। মুস্তাফা মন্ড ভেবেছিল যে বার্নার্ড আসলেই তাকে আলফা কোওয়ার্কারদের সামনেই নির্বাসন দেবে, কিন্তু বার্নার্ড ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিল সবার সামনে জনকে মুস্তাফা মন্ডের সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। যেহেতু ওয়ার্ল্ড স্টেট এ পিতা হওয়ার বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক কাজ ছিল, এবং এটা উপস্থিত সবার সামনে মুস্তাফা মন্ডকে হাসির পাত্র করে তোলে ফলে বার্নার্ডকে লন্ডনে মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে মুস্তাফা মন্ড পদত্যাগ করলেন।
জন তার পূর্বের অদ্ভুত জীবনযাপনের জন্যে লন্ডনের সমাজে বিখ্যাত হয়ে গেল। ওয়ার্ল্ড স্টেট এর কারখানা এবং স্কুল গুলোতে ঘুরে জন কিছুটা বিরক্ত বোধ করল। লেনিনার প্রতি তার যৌন আকর্ষনটা রয়েই গেল কিন্তু সে তার স্বাভাবিক যৌন চাহিদার চেয়ে বেশি কিছু যেন তার কাছ থেকে আশা করছিল যেটা তাকে ভয়ঙ্করভাবে দিশেহারা করেছিল। এ ব্যাপারে লেনিনাও কিছুটা বিভ্রান্ত হয়, কারন সে বুঝতে পারছিল না কেন জন তার সাথে স্বাভাবিক যৌণ আচড়ন করত না। এদিকে বার্নার্ড আদিম মানুষের (স্যাভেজ) অভিভাবক হিসেবে অনেক বিখ্যাত হয়ে গেল। তার সামাজিক অবস্থানের উন্নতি ঘটল। সে এই সুযোগে বিভিন্ন মানুষকে দাওয়াত দিত ও মেয়েদেরকে বিছানায় নিতে লাগল। তাদের বেশিরভাগই বার্নার্ডকে ঘৃণা করত কিন্তু জনের সাথে দেখা করার জন্যে তারা তার এই সব আচড়ন মেনে নিত। একদিন একদল অতিথি জনের সাথে দেখা করতে চাইলে সে তাতে অস্বীকৃতি জানালো।
সে সময় হেমোহলোজ জনের কাছে যায়। জন ও হেমোহলোজ ভালো বন্ধু হয়ে যায়। জন তাকে শেক্সপিয়রের রোমিও এন্ড জুলিয়েট থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনায় যেখানে ভালোবাসা, বিয়ে ও পিতামাতা সংক্রান্ত কথাবার্তা ছিল। যা শুনে হেমোহলোজ তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে। কারন এই বিষয় গুলো ওয়ার্ল্ড স্টেট এ হাস্যকর ও ঘৃণার বস্তু ছিল।
জনের অদ্ভুত ব্যবহারে লেনিনার মন আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। সে সোমা গ্রহন করে এবং জনের কাছে (বার্নার্ডের এপার্টমেন্টে) যায় এবং তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। উত্তরে সে তাকে আঘাত করে ও অভিশাপ দেয়। পরে তাকে শেক্সপিয়রের বই থেকে কিছু কথা শুনিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে সে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সে সময় একটা ফোনকল আসে যার মাধ্যমে সে জানতে পারে তার মা ওয়ার্ল্ড স্টেট এ ফেরার পর থেকে একেবারে স্থায়ীভাবে সোমা গ্রহন করছে এবং এখন তার মৃতপ্রায় অবস্থা। সে হাসপাতালে গিয়ে দেখে নিচু জাতের(শ্রেণীর) কিছু বাচ্চারা তার মৃতপ্রায় মাকে দেখে মৃত্যু সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করছিল। ভ্রুণ কালচারের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর সবাই ছিল দেখতে খুব সুন্দর। ফলে দীর্ঘদিন স্যাভেজ রিজার্ভেশনে থাকা লিন্ডার চেহারা হয়ে গিয়েছিল তাদের তুলনায় কুৎসিত। তাই এই সকল বাচ্চাদের কাছে এই বিষয়টা অদ্ভুত লাগে। তারা কৌতূহলবশত জানতে চায় সে এতোটা কুৎসিত কেনো যা জনকে মারাত্বক ক্ষিপ্ত করে তোলে।
লিন্ডার মৃত্যুর পরে জন ডেলটা শ্রেণীর ক্লোনের সাথে দেখা করে। এসময় হাসপাতাল থেকে তারা তাদের জন্যে বরাদ্দ করা সোমা গ্রহন করছিল। সে তাদেরকে বিদ্রোহ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে। সে তাদের সোমা জানালা দিয়ে ছুড়ে মারে ও দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করে। বার্নার্ড আর হেমোহলোজ এই ঘটনা শুনে জনের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে গিয়ে হেমোহলোজ তার সাথে যোগ দেয় কিন্তু বার্নার্ড কিছুটা পিছু হটে থাকে কারন সে জানত এই ঘটনার পরিণতি কি হতে পারে। পরে পুলিশ এসে সোমার বাষ্প ছেড়ে এই দাঙ্গা শান্ত করে ও বার্নার্ড, হেমোহলোজ আর জনকে গ্রেফতার করে মুস্তাফা মন্ডের অফিসে নিয়ে আসে যে পদত্যাগের পর ওয়ার্ল্ড স্টেট এ একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে কাজ করছিল। মুস্তাফা মন্ড বার্নার্ড ও হেমোহলোজকে ফকল্যান্ড দ্বীপে নির্বাসনের নির্দেশ দেয় কারনে সেখানে সমাজচ্যূতদের পাঠানো হত। এসময় জন ও মুস্তাফা মন্ড এর মাঝে বর্তমান সামাজিক কাঠামোটি কেনো প্রতিষ্ঠিত রাখা দরকার সে ব্যাপারে বিশাল বিতর্ক হয়। জন ইতিহাস, ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রয়োজনিয়তা তুলে ধরে। মুস্তাফা মন্ড দাবি করে বর্তমান সামাজিক গঠন মানুষের আনন্দকে সর্বোচ্চ সীমায় পৌছিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস, ধর্ম ও বিজ্ঞান মানুষের নাঝে আবেগ সৃষ্টি করে যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে যার ফলে সমাজের শান্তি নষ্ট হয়। সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্যেই তাদের অন্তরকে পরিবর্তন করা হয় এবং ঐ জিনিসগুলোকে উপেক্ষা করতে শেখানো হয় যা সমাজকে অস্থিতিশীল করবে। জন তার কথার বিরোধীতা করতেই থাকে। এক পর্যায়ে মন্ড তাকে বলে তুমি তো দূঃখ-কষ্ট ভোগ করার অধিকার দাবি করছো? এরপর মন্ড মানব জাতীর ইতিহাস থেকে বিভিন্ন ধরনের দূঃখ ও কষ্টের এক বিশাল তালিকা তুলে ধরে, ঈশ্বরের বিরোধীতা করে তার নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারা তুলে ধরে। উত্তরে জন বালে আমি এই সব গুলোই (দূঃখ ও কষ্ট) দাবী করছি।
মুস্তাফা মন্ড তাকে নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে চায়। সে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরের বাহিরে একটি দ্বীপের বাতিঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে একটি বাগান ও তীর ধনুক তৈরী করে। লিন্ডার মৃত্যুর জন্যে জনের নিজেকেই দোষী মনে হয়। বিবেকের দংশনে সে একটি চাবুক তৈরী করে নিজেকেই আঘাত করতে থাকে। কিছু ডেলটা শ্রেণীর মানুষ এই ঘটনা দেখতে পায় এবং তিন দিনের মাঝেই পত্রিকার সংবাদ দাতারা তার সাক্ষাতকার নিতে হাজির হয়। সে তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়ার সব রকম চেষ্টা করে। যাই হোক, কেউ একজন জনের আত্ম-নিগ্রহের এই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ধারন করে। পরের দিন শতশত হেলিকপ্টার সেখানে আসে শুধু মাত্র জনের এই আত্ম-নিগ্রহের ঘটনা অবলোকন করার জন্যে। লেনিনা ও হেনরি ফস্টার সেখানে আসে। সে লেনিনাকে তার চাবুক দিয়ে আঘাত করে। জনতার ভীর তার প্রতি অর্গি-পর্গি (Orgy-porgy) বলে চেঁচাতে থাকে। জন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরের দিন জ্ঞান ফিরলে সে সোমা গ্রহন করে ও কামূক নৃত্যের সাথে সে স্তুতি গান গায়। সে অপরাধ ও আত্ম-ঘৃণায় নিমগ্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যায় বাতিঘরের একটি খিলানে তার মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
ঘটনা প্রবাহের শুরু হয়েছিল সেন্ট্রাল লন্ডন হ্যাচারী এন্ড কন্ডিশনিং সেন্টারে। সেখানে হ্যাচারীর পরিচালক তার একজন সহকারিকে (হেনরি ফস্টার) নিয়ে একদল ছেলেকে হ্যাচারী ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল। তারা তখন বোকানভস্কি ও পডস্ন্যাপ প্রসেস সম্পর্কে শিখছিল। এই প্রক্রিয়ায় হ্যাচারী হাজার হাজার একই রকম ভ্রুণ তৈরী করতে সক্ষম ছিল। ভ্রুনগুলো গর্ভে থাকা অবস্থায়ই তাদেরকে বোতলে করে ফ্যাক্টরিতে তৈরী জিনিসের মত বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে ফেলা হয়। যারা আলফা শ্রেণীতে যায় তারা ভবিষ্যতে “ওয়ার্ল্ড স্টেট” এর নেতা ও বুদ্ধিজীবী হবে। এর পরের প্রতিটি শ্রেণীর ভ্রুণগুলোকে শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তার আগের শ্রেণীর থেকে কিছুটা দূর্বল করে তৈরী করা হয়। সবচেয়ে নিচের শ্রেণী এফসিলনকে অক্সিজেন বঞ্চিতকরণ ও রাসায়নিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করার করার জোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হয়। হ্যাচারীর একজন কর্মী লিনিয়া ক্রাউন বালকদেরকে বর্ণনা করে কিভাবে সে ভ্রুণগুলোকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় থাকার জন্যে টিকা দিচ্ছিল।
এরপর পরিচালক তাদেরকে হ্যাচারীর শিশুশালায় নিয়ে যায়। এখানে তারা কিছু ডেলটা শ্রেণীর শিশুদেরকে দেখতে পায়, যাদেরকে বই ও ফুল ঘৃণা করতে শিখানো হচ্ছিল। পরিচালক তাদের বললেন এই পদ্ধতি তাদেরকে নিরীহ ও অনুগত খাদকে পরিণত করবে। এরপর তিনি তাদেরকে ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট’ এর নীতিগুলো শেখানোর ‘হিপনোপ্যাডিক’ পদ্ধতির সম্পর্কে বললেন। যেখানে একটি কক্ষে শিশুরা ঘুমিয়ে থাকে আর একটি কন্ঠ তাদেরকে ফিসফিসিয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। এখানে সাধারণত প্রাথমিকভাবে তাদেরকে শ্রেণী সচেতনতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। এরপর তিনি তাদেরকে জানালা দিয়ে বাহিরে কিছু নগ্ন শিশুদেরকে দেখালেন যারা সেন্ট্রিফিউগাল বাম্বল পাপী(Centrifugal Bumble-Puppy) নামক একটি যৌণতাপূর্ণ খেলায় মত্ত ছিল।
এ পর্যায়ে মুস্তাফা মন্ড বালকদের কাছে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর দশ জন নিয়ন্ত্রকের একজন হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পর ওয়ার্ল্ড স্টেট এর ইতিহাস বর্ণনা করলেন। তারপর পৃথিবী থেকে সকল প্রকার আবেগ, ইচ্ছা ও মানবীয় অনুভূতি দূর করার ক্ষেত্রে তাদের সফলতার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। ওয়ার্ল্ড স্টেট এর মটো তিনটি – কমিউনিটি, আইডেনটিটি ও স্ট্যাবিলিটি। এই সময় লেনিনা হ্যাচারীর বাথরুমে হেনরি ফস্টার ও তার সম্পর্ক নিয়ে ফ্যানি ক্রাউনের সাথে কথা বলছিলেন। ফ্যানি তাকে হেনরি ফস্টারের সাথে ৪ মাসের সম্পর্ক নিয়ে তিরস্কার করল। তখন লেনিনা বার্নার্ড মার্ক্স এর প্রতি তার আকর্ষনের কথা স্বীকার করল। এদিকে হ্যাচারির অন্য এক জায়গায় হেনরী ও আর একজন সহকারী প্রিডেসটিনেটরের লেনিনাকে ভোগ করার বিষয়ে কথোপকথন শুনে বার্নার্ড মার্ক্স রাগে ফুসছিল।
কাজ শেষে লেনিনা বার্নার্ড মার্ক্সকে জানালো নিউ মেক্সিকোতে “স্যাভেজ রিজার্ভেশন” তার সাথে যেতে পারলে সে খুব খুশি হবে। বার্নার্ড এতে কিছুটা বিব্রত আবার খুব আনন্দিত হল। তার বন্ধু হেমহোলজ (Helmholtz Watson) এর সাথে দেখা করার জন্যে একটি হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা দিল। সে আর তার বন্ধু “ওয়ার্ল্ড স্টেট” এর ব্যাপারে তাদের অসন্তুস্টি ও ক্ষোভ নিয়ে আলোচনা করল। প্রথমে বার্নার্ডই তার রাগ প্রকাশ করল কারন জাতের দিক দিয়ে সে ছিল একেবারে নিচু শ্রেণীর এবং শারীরিক আকৃতির দিক দিয়ে সে ছিল খুব ছোট। হেমহোলজ এর অসন্তুষ্টির কারন হল তাকে সম্মোহনী ভাষা লিখতে বলা হয়েছিল, যেটি ছিল তার বুদ্ধিমত্তার স্তরের তুলনায় নিচু স্তরের কাজ। কয়েকদিন পরে বার্নার্ড তার উর্ধঃতন কর্মকর্তার কাছে “স্যাভেজ রিজার্ভেশন” এ যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করল। পরিচালক তাকে ২০ বছর আগে একজন মহিলাকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার একটি ঘটনা বলল। ঝড়ের মাঝে সে তাকে হারিয়ে ফেলে পরে তাকে আর খুজে পায়নি।
অবশেষে সে তাকে স্যাভেজ রিজার্ভেশনে (আদিম মানুষের সংগ্রহশালা) যেতে অনুমতি দিলে সে আর লেনিনা সেখানে যাত্রা করে। যাত্রার পূর্বে সে হেমহোলজ এর সাথে দেখা করে ও জানতে পারে যে পরিচালক তার কঠিন ও অসামাজিক ব্যবহারে তার প্রতি বিরক্ত ও তাকে আইসল্যান্ডে নির্বাসিত করার পরিকল্পনা করেছেন। রাগে ক্ষুব্ধ হয়ে বার্নার্ড রিজার্ভেশনের দিকে যাত্রা করে। আদিম মানুষের সংগ্রহশালায় গিয়ে সে আর লেনিনা সেখানকার বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ অধিবাসীদের দেখে বিস্মিত হল। কারন ওয়ার্ল্ড স্টেট এর কোন ব্যাক্তির মাঝেই বার্ধক্যের কোন চিহ্ন দেখা যেত না। তারা একটি ধর্মীয় রীতির বাস্তবায়ন দেখল যেখানে কোন একটি জঘন্য খারাপ কাজের জন্যে একজন যুবককে চাবুক দিয়ে মারা হচ্ছিল। এই ঘটনার পর তাদের সাথে একজন ফর্সা চামড়ার যুবকের সাথে দেখা হল যে গ্রামের অন্যদের থেকে আলাদাভাবে একাকী অবস্থান করছিল। পিতৃ পরিচয় জানতে চাইলে জন তার পরিচয় হিসেবে বলল তার মায়ের নাম হল লিন্ডা যাকে ২০ বছর আগে গ্রামবাসী উদ্ধার করেছিল। বার্নার্ড বুঝতে পারল, পরিচালক যে নারীর কথা বলেছিলো, জনের মা লিন্ডাই হল সেই মহিলা। জনের সাথে কথা বলে সে জানতে পারল লিন্ডাকে গ্রামবাসী একঘরে করে রেখেছে, কারন সে গ্রামের সকল পুরুষের সাথেই ঘুমাতে ইচ্ছুক। একারনেই জন গ্রামবাসীদের থেকে আলাদা হয়ে গ্রামের বাহিরে একাকী জীবনযাপন করছে। সে তাকে আরো জানায় সে বই পড়া শিখেছে দুটি বই থেকে যার একটি হল “কেমিক্যাল বন্ড ও ব্যাকটেরিওলজিক্যাল কন্ডিশনিং অফ এমব্রয়ো” এবং অন্যটি হল “দ্যা কমপ্লিট ওয়ার্কস অফ শেক্সপিয়র”। ২য় বইটি পোপ নামক লিন্ডার এক প্রেমিক লিন্ডাকে দিয়েছে। জন তখন বার্নার্ডকে বলে সে তার গ্রামের বাহিরে যে আরেকটি পৃথিবী আছে অর্থাৎ “ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড” দেখতে ইচ্ছুক। এই ব্যাপারে সে তার মায়ের কাছে অনেক গল্প শুনেছে। বার্নার্ড তাকে ওয়ার্ল্ড স্টেটে আসার আহবান করল। জন রাজি হল তবে সে তার মা লিন্ডাকে সাথে নেয়ার জন্যে পিড়াপিড়ি করল।
এদিকে রিজার্ভেশনে থেকে লেনিনা একেবারে বীতশ্রুদ্ধ হয়ে বেশি পরিমানে সোমা গ্রহন করে, ফলে সে প্রায় ১৮ ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে থাকে। বার্নার্ড সান্তা ফিতে উড়ে গিয়ে মুস্তাফা মন্ড এর সাথে দেখা করে জন ও লিন্ডাকে ওয়ার্ল্ড স্টেট এ নিয়ে আসার জন্যে অনুমতি নেয়। জন এ সময় অজ্ঞান লেনিনার ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করে ও তাকে স্পর্শ করার ইচ্ছাটা পূরণ করে। জন, লিন্ডা, বার্নার্ড ও লেনিনা বিমানে করে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর দিকে যাত্রা করে। মুস্তাফা মন্ড ভেবেছিল যে বার্নার্ড আসলেই তাকে আলফা কোওয়ার্কারদের সামনেই নির্বাসন দেবে, কিন্তু বার্নার্ড ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিল সবার সামনে জনকে মুস্তাফা মন্ডের সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে। যেহেতু ওয়ার্ল্ড স্টেট এ পিতা হওয়ার বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক কাজ ছিল, এবং এটা উপস্থিত সবার সামনে মুস্তাফা মন্ডকে হাসির পাত্র করে তোলে ফলে বার্নার্ডকে লন্ডনে মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে মুস্তাফা মন্ড পদত্যাগ করলেন।
জন তার পূর্বের অদ্ভুত জীবনযাপনের জন্যে লন্ডনের সমাজে বিখ্যাত হয়ে গেল। ওয়ার্ল্ড স্টেট এর কারখানা এবং স্কুল গুলোতে ঘুরে জন কিছুটা বিরক্ত বোধ করল। লেনিনার প্রতি তার যৌন আকর্ষনটা রয়েই গেল কিন্তু সে তার স্বাভাবিক যৌন চাহিদার চেয়ে বেশি কিছু যেন তার কাছ থেকে আশা করছিল যেটা তাকে ভয়ঙ্করভাবে দিশেহারা করেছিল। এ ব্যাপারে লেনিনাও কিছুটা বিভ্রান্ত হয়, কারন সে বুঝতে পারছিল না কেন জন তার সাথে স্বাভাবিক যৌণ আচড়ন করত না। এদিকে বার্নার্ড আদিম মানুষের (স্যাভেজ) অভিভাবক হিসেবে অনেক বিখ্যাত হয়ে গেল। তার সামাজিক অবস্থানের উন্নতি ঘটল। সে এই সুযোগে বিভিন্ন মানুষকে দাওয়াত দিত ও মেয়েদেরকে বিছানায় নিতে লাগল। তাদের বেশিরভাগই বার্নার্ডকে ঘৃণা করত কিন্তু জনের সাথে দেখা করার জন্যে তারা তার এই সব আচড়ন মেনে নিত। একদিন একদল অতিথি জনের সাথে দেখা করতে চাইলে সে তাতে অস্বীকৃতি জানালো।
সে সময় হেমোহলোজ জনের কাছে যায়। জন ও হেমোহলোজ ভালো বন্ধু হয়ে যায়। জন তাকে শেক্সপিয়রের রোমিও এন্ড জুলিয়েট থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনায় যেখানে ভালোবাসা, বিয়ে ও পিতামাতা সংক্রান্ত কথাবার্তা ছিল। যা শুনে হেমোহলোজ তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে। কারন এই বিষয় গুলো ওয়ার্ল্ড স্টেট এ হাস্যকর ও ঘৃণার বস্তু ছিল।
জনের অদ্ভুত ব্যবহারে লেনিনার মন আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। সে সোমা গ্রহন করে এবং জনের কাছে (বার্নার্ডের এপার্টমেন্টে) যায় এবং তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। উত্তরে সে তাকে আঘাত করে ও অভিশাপ দেয়। পরে তাকে শেক্সপিয়রের বই থেকে কিছু কথা শুনিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে সে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সে সময় একটা ফোনকল আসে যার মাধ্যমে সে জানতে পারে তার মা ওয়ার্ল্ড স্টেট এ ফেরার পর থেকে একেবারে স্থায়ীভাবে সোমা গ্রহন করছে এবং এখন তার মৃতপ্রায় অবস্থা। সে হাসপাতালে গিয়ে দেখে নিচু জাতের(শ্রেণীর) কিছু বাচ্চারা তার মৃতপ্রায় মাকে দেখে মৃত্যু সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করছিল। ভ্রুণ কালচারের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড স্টেট এর সবাই ছিল দেখতে খুব সুন্দর। ফলে দীর্ঘদিন স্যাভেজ রিজার্ভেশনে থাকা লিন্ডার চেহারা হয়ে গিয়েছিল তাদের তুলনায় কুৎসিত। তাই এই সকল বাচ্চাদের কাছে এই বিষয়টা অদ্ভুত লাগে। তারা কৌতূহলবশত জানতে চায় সে এতোটা কুৎসিত কেনো যা জনকে মারাত্বক ক্ষিপ্ত করে তোলে।
লিন্ডার মৃত্যুর পরে জন ডেলটা শ্রেণীর ক্লোনের সাথে দেখা করে। এসময় হাসপাতাল থেকে তারা তাদের জন্যে বরাদ্দ করা সোমা গ্রহন করছিল। সে তাদেরকে বিদ্রোহ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে। সে তাদের সোমা জানালা দিয়ে ছুড়ে মারে ও দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করে। বার্নার্ড আর হেমোহলোজ এই ঘটনা শুনে জনের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে গিয়ে হেমোহলোজ তার সাথে যোগ দেয় কিন্তু বার্নার্ড কিছুটা পিছু হটে থাকে কারন সে জানত এই ঘটনার পরিণতি কি হতে পারে। পরে পুলিশ এসে সোমার বাষ্প ছেড়ে এই দাঙ্গা শান্ত করে ও বার্নার্ড, হেমোহলোজ আর জনকে গ্রেফতার করে মুস্তাফা মন্ডের অফিসে নিয়ে আসে যে পদত্যাগের পর ওয়ার্ল্ড স্টেট এ একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে কাজ করছিল। মুস্তাফা মন্ড বার্নার্ড ও হেমোহলোজকে ফকল্যান্ড দ্বীপে নির্বাসনের নির্দেশ দেয় কারনে সেখানে সমাজচ্যূতদের পাঠানো হত। এসময় জন ও মুস্তাফা মন্ড এর মাঝে বর্তমান সামাজিক কাঠামোটি কেনো প্রতিষ্ঠিত রাখা দরকার সে ব্যাপারে বিশাল বিতর্ক হয়। জন ইতিহাস, ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রয়োজনিয়তা তুলে ধরে। মুস্তাফা মন্ড দাবি করে বর্তমান সামাজিক গঠন মানুষের আনন্দকে সর্বোচ্চ সীমায় পৌছিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস, ধর্ম ও বিজ্ঞান মানুষের নাঝে আবেগ সৃষ্টি করে যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে যার ফলে সমাজের শান্তি নষ্ট হয়। সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্যেই তাদের অন্তরকে পরিবর্তন করা হয় এবং ঐ জিনিসগুলোকে উপেক্ষা করতে শেখানো হয় যা সমাজকে অস্থিতিশীল করবে। জন তার কথার বিরোধীতা করতেই থাকে। এক পর্যায়ে মন্ড তাকে বলে তুমি তো দূঃখ-কষ্ট ভোগ করার অধিকার দাবি করছো? এরপর মন্ড মানব জাতীর ইতিহাস থেকে বিভিন্ন ধরনের দূঃখ ও কষ্টের এক বিশাল তালিকা তুলে ধরে, ঈশ্বরের বিরোধীতা করে তার নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারা তুলে ধরে। উত্তরে জন বালে আমি এই সব গুলোই (দূঃখ ও কষ্ট) দাবী করছি।
মুস্তাফা মন্ড তাকে নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে চায়। সে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরের বাহিরে একটি দ্বীপের বাতিঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে একটি বাগান ও তীর ধনুক তৈরী করে। লিন্ডার মৃত্যুর জন্যে জনের নিজেকেই দোষী মনে হয়। বিবেকের দংশনে সে একটি চাবুক তৈরী করে নিজেকেই আঘাত করতে থাকে। কিছু ডেলটা শ্রেণীর মানুষ এই ঘটনা দেখতে পায় এবং তিন দিনের মাঝেই পত্রিকার সংবাদ দাতারা তার সাক্ষাতকার নিতে হাজির হয়। সে তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়ার সব রকম চেষ্টা করে। যাই হোক, কেউ একজন জনের আত্ম-নিগ্রহের এই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ধারন করে। পরের দিন শতশত হেলিকপ্টার সেখানে আসে শুধু মাত্র জনের এই আত্ম-নিগ্রহের ঘটনা অবলোকন করার জন্যে। লেনিনা ও হেনরি ফস্টার সেখানে আসে। সে লেনিনাকে তার চাবুক দিয়ে আঘাত করে। জনতার ভীর তার প্রতি অর্গি-পর্গি (Orgy-porgy) বলে চেঁচাতে থাকে। জন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরের দিন জ্ঞান ফিরলে সে সোমা গ্রহন করে ও কামূক নৃত্যের সাথে সে স্তুতি গান গায়। সে অপরাধ ও আত্ম-ঘৃণায় নিমগ্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যায় বাতিঘরের একটি খিলানে তার মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
No comments:
Post a Comment
Thank you for commenting