ফ্রান্সের বোউভিলে বসবাসরত একজন ইতিহাসবিদ এনটোইন রোকুএন্টিন একটি ডায়েরি শুরু করেন যা তাকে অদ্ভুত এবং হতাশাজনক অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। যেগুলি গত কয়েক দিন ধরে তার বিরক্তির কারন হয়েছিল। তার কি ভুল হয়েছে তা তিনি ধরতে পারছেন না, তার কি আসলেই ডায়েরি রাখা উচিত কিনা, সে ব্যাপারেও তিনি নিশ্চিত নন।
তিনি দাবি করেন যে এক প্রকার মানসিক অসুস্থতা বা "মানসিক চাপ" তার মস্তিষ্ক ও শরীরে চেপে বসতে শুরু করেছে, যদিও তিনি জানেন না যে এটি কোথা থেকে এসেছে। বিষয়টা ঠিক এমন নয় যে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ শেলফিশ খাচ্ছেন। এই মানসিক চাপ ভোলার জন্যে তিনি সাধারন যৌন কর্ম ও একটি ব্যক্তিগত ঐতিহাসিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলেন।
তিনি তার ডায়েরিতে সব কিছু নোট করছিলেন, হয়তো একটি পাথর ধরেছিলেন বা বিয়ারের গ্লাসের দিকে তাকিয়েছিলেন বা রাস্তায় একটি ভেজা কাগজ ছুয়ে ছিলেন সবই তিনি তার ডায়েরিতে নোট করছিলেন। প্রতিবাই তিনি একটি বিরক্তিকর এবং অপ্রতিরুদ্ধ অনুভূতি টের পাচ্ছিলেন।
গত ১০ বছর যাবত সে মার্কুইস দ্যা রোলেবন এর উপর গবেষনা করছিলেন। এই রোলেবন সাহেব একজন ফরাশী অভিজাত ব্যাক্তি, যে বৌভিল এ বসবাস করত। রোউকুটিন তাই বৌভিল এ এসে পড়তে বাধ্য হয়। কারন তাকে এই গবেষণা শেষ করতে হবে এবং একটি বই লিখতে হবে। যখনি সে আয়নার দিকে তাকায়, সে কি তার নিজের মুখাবয়ব দেখছে নাকি রোলেবনের বুঝতে পারে না। সে তার কাজের মাঝে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। তার কাছে মনে হচ্ছিল, সে তার কাজটি কখনোই শেষ করতে পারবে না, বর্তমানের চেয়ে সে অতীত দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তার এই অস্বস্তিকর অনুভূতির সাথে তার অস্তিত্বের কিছু সম্পর্ক আছে। সে বুঝতে পারে সে তার অতীত ও রোলেবনকে সাধারনভাবে ব্যবহার করছে, তার নিজের অস্তিত্বের সমর্থনে। সে ক্ষোভের সাথে তার নিজের অস্তিত্বের দাবী করে, কারন তার আশে পাশে যা কিছুই আছে তারা সবাই তাদের নিজের অস্তিত্ব দাবি করছে। সে যখন তার আশে পাশের সকল বস্তুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, সে আবিষ্কার করে , “existence precedes essence”।
চেষ্টনাট গাছে শেকড়ের দিকে তাকিয়ে তিনি তার সারাংশ উপলব্ধি করলেন। যখনি সে প্রতিটি বস্তুর সারাংশের প্রতি লক্ষ করছিল প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ব সাথে তার একটা দ্বন্দ কাজ করছিল, এবং এটাই ছিল তার অসুস্থতার কারন।
এনটোইন রোকুএন্টিন এর মাঝে মাঝেই অসুস্থতা অনুভব হতে লাগলো, আবার মাঝে মাঝেই সে সুস্থ অনুভব করল। সে মাঝে মাঝে তার প্রাক্তন বান্ধবী এনি কে চিঠি লিখতে লাগলো, কিন্তু বেশি কিছু লিখতে পারতো না, আর পুরোনো স্মৃতি গুলো তাকে নাড়া দিয়ে যেত। রোউকুএন্টিন ফ্রান্স এ তার প্রাক্তন বান্ধবীর সাথে দেখা করলেন। সে আশা করেছিল তারা আবার নিজেদের সম্পর্কটা আগেরমত করে নিবে, কিন্তু সে খেয়াল করল তারা আর আগের মত কথা বলতে পারছে না। তার বান্ধবী আর আগের মত নেই। সে অযথাই তার নিজের অসুস্থতার কথা তার বান্ধবী এনি কে বলল, কিন্তু সে কিছুই বুঝলো না। তারা আর কখোনো দেখা করবে না এটা জেনেই তারা আলাদা হল। সে বৌভিল এ ফিরে এলো, তার অতীত কে ভূলে বর্তমান অস্তিত্বকে আকড়ে ধরতে চাইলো ।
সে মাঝে মাঝেই লাইব্রেরীতে যেত একজন আত্মশিক্ষিত মানুষের সাথে যার নাম ছিল অগিয়ার। সে খেয়াল করল তার সঙ্গী লাইব্রেরীর বই গুলো পড়ছে একটা বর্ন ক্রমানুসারে। এনটোইন নিশ্চিত হল যে, এই লোকটি লাইব্রেরির সকল বই পড়ে শেষ করবে। এন্টোইন তাকে সম্মানের চোখেই দেখতে লাগলো। একদিন এন্টোইন লাইব্রেরীতে তার কাজ করছিল, আর অগিয়ার তার নতুন বই পড়ছিল, সে খেয়াল করল, তাদের পাশে আরো দুই জন ছোট্ট ছেলে বসা আছে। আর অজিয়ার তাদের একজন এর পা এ আদর করছিল। পাশে বসা মহিলাটিও তা খেয়াল করলেন। অগিয়ার কে লাইব্রেরী থেকে বের করে দেয়া হল।
সে তার প্রিয় পুরোনো ক্যাফেতে ফিরে এলো, তার প্রিয় রেকর্ডস গুলো বাজাতে অনুরোধ করল, যাতে করে সে তার দুঃখ ও মানসিক অসুস্থতা বোধ ভুলে থাকতে পারে। তার জীবন টা কেমন যেন শূন্যতায় ভরা ছিল। সে তার কাজ টি বাদ দিয়ে প্যারিস ফিরে গেল আর নতুন করে নভেল লেখায় আত্মনিয়োগ করল।
No comments:
Post a Comment
Thank you for commenting