English Literature klinton jack

Monday, January 20, 2020

The Canterbury Tales - Bangla

এক নজরে ক্যান্টারবারি টেলস 

এক নজরে ক্যান্টারবারি টেলস
পুরো শিরোনামঃ দি ক্যান্টারবারি টেলস।
গ্রন্থকারঃ জিউফ্রে চসার।
রচনার ধরনঃ কাব্য।
ধরনঃ বর্ণনাধর্মী কবিতাচরিত্র পরিচয়, ব্যঙ্গ, হাস্যরস, রোমান্স ও নীতিকাহিনী।
ভাষাঃ মধ্যযুগীয় ইংরেজি ।
রচনার সময় ও স্থান : ইংল্যান্ড, ১৩৮৬ খ্রি. হতে ১৩৯৫ খ্রি.।
প্রথম প্রকাশের তারিখ : সম্ভবত পনের শতকের প্রথম দিক।
বর্ণনাকারীঃ  প্রাথমিক বর্ণনাকারীর উল্লেখ নেই, পরবর্তী বর্ণনাকারী তীর্থযাত্রী দল, যারা একের পর এক কাহিনী বলেছেন।
দৃষ্টিভঙ্গিঃ কাব্যের ভূমিকায় প্রথম পুরুষে বর্ণনা, পরবর্তীতে কাব্যে উল্লেখিত
তীর্থযাত্রীদের গল্প বলার মধ্য দিয়ে পুরো কাহিনী অগ্রসর হয়েছে।
বৈশিষ্ঠ্যঃ কাহিনী আবর্তিত হয়েছে হাস্যরস, উচ্চাকাজক্ষা, ধর্মভীরুতা, ইহজাগতিকতা, শ্লীল ও অশ্লীলতা, কৌতুক, ইত্যাদি আশ্রয় করে ।
কালঃ অতীতকাল।
রচনার সময়কাল : চতুর্দশ শতকের শেষ দিক ।
ঘটনার শুরুর স্থান : ক্যান্টারবারি যাওয়ার রাস্তায় অবস্থিত ট্যাবার্ড সরাইখানা ।
ঘটনার মূল নায়কগণ : নির্দিষ্ট বিশেষ কোনো মূল ব্যক্তি নেই। চসারের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি তীর্থযাত্রীর মুখ থেকে কাহিনী পরিবেশন করানো, তবে কোনো কোনো কাহিনীতে কিছু মূল চরিত্র লক্ষ করা যায়, যেমনঃ নাইটের গল্পে আরকাইট ও পলোম্যান, নানস প্রিস্টস টেলসের মোরগ চ্যান্টিক্লিয়ার ইত্যাদি।
মূল দ্বন্দঃ চরিত্রসমূহের ভেতরে উদ্ভূত নানা সমস্যা, কাহিনীসমূহে উদ্ভূত জটিলতা তীর্থযাত্রীদের মাঝেকার শ্রেণী দ্বন্দ, প্রতিটি তীর্থযাত্রীর আলাদা বৈশিষ্ট্য, তাদের পেশাগত নানা পার্থক্য ইত্যাদি।
উদ্ভূত প্রতিক্রিয়াঃ ক্যান্টারবারি তীর্থের উদ্দেশে যাত্রাকারী তীর্থযাত্রীদের মাঝে অনুষ্ঠিত গল্প বলার প্রতিযোগিতা এসব গল্প বিচারের জন্য বিচারক তৈরি।
চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াঃ  তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
শেষ প্রতিক্রিয়াঃ তেত্রিশ জনের গল্প বলা শেষ হলে পাপ মোচনের জন্যে সবার প্রার্থনা।
মূল সুরঃ বন্ধু ও সঙ্গীর গুরুত্ত্ব, গির্জার অনিয়ম।
মূল বিষয়বস্তু : রোমান্স, নীতিকাহিনী।
প্রতীকঃ বসন্তকাল, বেশভুষা, চরিত্র নির্ণয়।
ঘটনার পূর্বাভাসঃ নেই।

নির্বাচিত টিকাসমূহঃ
A New Rechel: রাচেল হলেন বাইবেলোক্ত জ্যাকবের পত্নী ও জোশেফের মাতা। মধ্যযুগে তারা রীতিমত সম্মানের সাথে বন্দিত হতেন।
Amphior : থিবসের রাজা, সুরেলা কণ্ঠের জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।
Apollo : সূর্যদেবতা।
Archbishop Dunstan : আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি (৯২৪-৯৮৮)।
Argus : পুরাণোক্ত শত চক্ষুবিশিষ্ট দানব, যে দানব মূল্যবান সম্পদ পাহারা দিত।
Arnold : পনের শতকের বিখ্যাত ফরাসি চিকিৎসক।
Avicenna : আরবীয় চিকিৎসক। যার চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থে বিষাক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।
Azure : এক ধরনের দামি পাথর, বর্তমান নাম Lapiz Lazuli.
Bacchus : সুরা দেবতা।
Bab up and down : ক্যান্টারবারির নিকটবর্তী একটি শহর ।
Balogna : চসারের সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রসর একটি কেন্দ্র।
Cato : বিখ্যাত রোমান লেখক ও বক্তা।
Centaurs : অর্ধ অশ্ব ও অর্ধ মানব আকৃতির পুরাণোক্ত জীব, পুরাণমতে জঙ্গলে তার আবাস ।
Cerberus : পুরাণোক্ত তিন মাথা ও সাপের লেজযুক্ত পাতালপুরির গেটের পাহারাদার।
Cicero : রোমান লেখক ও বিখ্যাত বক্তা।
Croesus : লিডিয়ার রাজা।
Delphi : প্রাচীন গ্রিক নগরীর যে স্থান হতে দেবতা অ্যাপোলো দৈববাণী করতেন।
Ganelon of France : ফরাসি মহাকাব্য chanson de Raland-এর একটি চরিত্র।
Greyn : চসারের সময়ে এ শব্দটির নানা অর্থ ছিল, বিশেষ করে শস্যদানা, মুক্তাদানা ইত্যাদি।
Hasdrubal : কার্থেজের রাজা।
in principio/Mulier est hominis confusio : ল্যাটিন ভাষায় নারী পুরুষের পতনের কারণ, চসারের নানস প্রিস্ট টেলের নায়িকা মুরগি পার্টোলোট বলেছে, নারী পুরুষের আনন্দের উৎস।
Jason : গ্রিক নাটক মিডিয়ায় উল্লেখিত নায়িকা মিডিয়ার স্বামী।
Paris : হোমারের ইলিয়াড মহাকাব্যে উল্লেখিত সুন্দরী রমণী হেলেনের অপহরণকারী ট্রয়ের রাজপুত্র।
Juno : রোমান পুরাণমতে দেবরাজ জুপিটারের রানী।
Iscariot : যিশু খ্রিষ্টের কাছাকাছি অবস্থান করে পরে তার পক্ষ ত্যাগ করে।
Lancelot of the lake : রাজা আর্থারের গোলটেবিলের বিখ্যাত নাইট।
Lepe : স্পেনের নগরী, কড়া মদের জন্য বিখ্যাত।
Livy : রোমান ঐতিহাসিক (৫৫ খ্রি. পূ.)
Mead : মধু থেকে তৈরি এক ধরনের কড়া মদ।
Minotaur : ঘাড়ের মাথা ও মানুষের শরীরবিশিষ্ট পুরাণোক্ত দানব।
Orpheus : পুরাণোক্ত বিখ্যাত বাদক, যে বীণা বাজিয়ে পাতালের প্রহরীকে মুগ্ধ করে নিজের মৃত স্ত্রীকে ফিরিয়ে এনেছিল।
Pallas : দেবী এথেনি।
Phebus : দেবতা অ্যাপোলোর অপর নাম ।
Pluto and Proserpina : পরি রাজ্যের রাজা-রানী।
Pyrrhus : যে গ্রিক সেনা ট্রয়রাজ প্রায়ামকে হত্যা করেছিল।
Saint Augustine: বিখ্যাত খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, সিটি অব গড গ্রন্থের রচয়িতা। 
Seneca : রোমান দার্শনিক ও লেখক।
St. Helen : কনস্টানটাইনের মাতা।
Tartary : রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রাজ্য ।
Taurus : রাশি চক্রের বৃষ রাশি ।
Telephus : মাইসিয়ান রাজা ।

Zion : চসারের সময়কালের উল্লেখযোগ্য নগরী।





The Canterbury Tales - Prologue Bengali Translation



মুখবন্ধ
যখন এপ্রিল মাস বৃষ্টিধারার মাধূর্য ছিটিয়ে মার্চের শুকনো
দিনগুলোকে দূর করে দিয়ে সমস্ত বৃক্ষরাজিকে
ভিজিয়ে দ্রুত ফুল ফোটানোর সময়কে এগিয়ে আনে,
যখন পশ্চিমা হাওয়া সমস্ত বনাঞ্চল আর শস্যক্ষেতের
নতুন কুঁড়িতে জাগায় সাড়া, যখন নবীন সূর্য 
মেঘরাশির অর্ধেক পথ চলা সমাপন করে,
এবং পাখিরা যখন প্রকৃতির পরশে সারারাত জেগে
সুমধুর সুরে তাদের গান পরিবেশন করে।
আর তখনই মানুষের মনে জাগে তীর্থযাত্রার ইচ্ছা
পবিত্র তালপাতা ধারণকারী সাধুর মনে ইচ্ছে জাগে 
বিদেশ যাত্রা আর নানা দেশের পবিত্র স্থান দর্শনের,
আর বিশেষ করে ইংল্যান্ডের প্রতিটি অঞ্চল থেকে
তখন মানুষেরা যাত্রা শুরু করে ক্যান্টারবারির উদ্দেশে,
যে পবিত্র আত্মা পীড়িত অবস্থায় জীবনদান করে
তাদের সহায়তা করেছিলেন তারই দর্শনের তরে 
ঠিক এমনি একটি সময়ে আমি আমার
একজন একান্ত শিষ্যসহযোগে তীর্থযাত্রার উদ্যোগ
নিয়ে সাউথওয়ার্কের ট্যাবার্ডে এসে হাজির হলাম।
আর এরই মাঝে রাত নামার সাথে সাথে
উনিশ জনের একটি দল এসে হাজির হল সরাইখানায়। 
নানা ধরনের পেশার সাথে জড়িত মানুষ তারা,
আকস্মিকভাবেই তারা এখানে এসে মিলেছে সবাই 
এখানে উপস্থিত সবাই অশ্বরোহণে চলেছেন ক্যান্টারবারি তীর্থে।
সরাইখানার কামরা আর আস্তাবলগুলো বেশ বড় বড়
যার কারণে কারোরই থাকার জায়গার অভাব হল না।
সন্ধে নামার কিছুটা পরেই আমি সেসব তীর্থযাত্রীদের
সাথে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সাথে মিশে গেলাম 
সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, খুব ভোরে যাত্রা করব মোরা।
আমি সেই তীর্থযাত্রার কাহিনীই পরিবেশন করব।
যেহেতু গ্রন্থেও আছে পাতা আর হাতে আছে সময়।
তাতে তীর্থযাত্রীদের যতটা পরিচয় জেনেছি আমি
তা আপনাদেরকে এ বেলাতেই জানিয়ে রাখি 
তারা কারা, তাদের পদমর্যাদা আর কেমন পোশাক পরেছেন তারা 
কাহিনী শুরু করছি একজন নাইটের পরিচয় দিয়ে।

The Knight - নাইট
একজন নাইট ছিল আমাদের মাঝে, বড়ই সাহসী সে,
অশ্বরোহণের সূচনা পর্ব থেকেই সে ছিল পরাক্রম
সম্মান, উদারতা আর ভদ্রতার অনুরাগী।
তার প্রভুর হয়ে সে সব যুদ্ধে জয়ী হয়ে প্রশংসা পেয়েছে।
এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সে খ্রিষ্টীর-অখ্রিষ্টীয় সব দেশ পর্যটন করেছে।
সে কারণে সাহসের প্রসঙ্গ এলে সবাই তারই কথা বলে।
সে ছিল আলেকজান্দ্রিয়া বিজয়ের কালে,
প্রশিয়ায় ভিনদেশি সব নাইটদের সভায়
বহুবার সে প্রধান আসনটি দখল করেছে।
লিথুনিয়া আর রাশিয়ায় যুদ্ধে এতটাই কৃতিত্ব
প্রদর্শন করেছে যা অন্য নাইটরা কখনো পারেনি।
আলজিরিয়া অবরোধ কালে সে গ্রানাডাতেও ছিল।
আর বেলমারির যুদ্ধেও সে অংশ নিয়েছে।
আয়াস আর সাটালিয়া বিজয়ে সেও ছিল।
আর ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার অনেক অভিযানেও ছিল সে
আলজেরিয়ায় ধর্মকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে
তিন তিনটি বার অংশগ্রহণ করা ছাড়াও সে
পনেরটি বড় বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে
আর প্রত্যেকবারই সে তার প্রতিযোগীকে নিধন করেছে।
তুরস্কে একবার এই সাহসী নাইট পালাটাইয়ি
রাজের সাথী হয়েছিল আর লাভ করেছিল অনেক লুষ্ঠিত সম্পদ।
সাহসী হলেও জ্ঞানী আর বিনয়ী ছিল সে আর
তার আচার আচরণ ছিল একজন বালিকার মতই নম্র,
তার জীবনে কখনো কাউকে দেয়নি গালি, বড়ই
শান্ত স্বভাবের ছিল এই বিনম্র সুশীল নাইট।
এবার বলি তার পোশাক আর অস্ত্রশস্ত্রের কথা।
সুতার একটি মোটা কোট পরনে তার,
সেটাও আবার তার বক্ষাবরণের মরিচার দাগে ভরা
কারণ সে তার অভিযান শেষ করেই তীর্থযাত্রা করেছে।

Squyer or The Squire
নাইটের সাথে ছিল তার যুবক পুত্র একজন অনুচর।
অবিবাহিত উৎফুল্ল তরুণ প্রেমিক সে।
কোকড়ানো কেশ দেখে মনে হয় বড়ই যত্নে সাজানো তা।
সম্ভবত বছর কুড়ি বয়স তার, মাঝামাঝি উচ্চতা
সদাচঞ্চল আর গায়ে গতরে খুবই শক্তিমান।
এরই মাঝে সে ফ্লন্ডার্সর্টোয়েস আর পিকার্ডিতে
অশ্বারোহী সেনাদলের সাথে অভিযানে অংশ নিয়েছে,
আর তার প্রেমিকার প্রেম প্রত্যাশার প্রচেষ্টায় সে
সফল হয়েছে বলা চলে। লাল আর সাদা পুষ্পে
সয়লাব মাঠের মতই তার পোশাক-আশাক।
সারাদিন সে বাঁশিতে সুর তোলে অথবা গান করে।
মে মাসের মতই যেন সে উৎফুল্ল সদানন্দময়।
জামাটা তার ঝুলে খাটো হলেও লম্বা-চওড়া তার হাতা দুটো।
অশ্বারোহণে বড়ই দক্ষ সে, চালক হিসেবেও ভালো।
সে একজন গীতিকার আর গানে সুরও করে নিজেই।
দ্বন্দযুদ্ধ কিংবা নৃত্যকলা দুটোতেই সমান দক্ষ সে।
ভালো ছবি আঁকে, লিখতেও পারে বেশ 
তার প্রেমাবেগ এতটাই প্রবল যে, সারারাত
সে জেগে থাকে নাইটিঙ্গেল পাখির মতই।
বড়ই নম্র, বড়ই বিনয়ী আর অন্যের সহায়তাকারী সে।
বাবার সাথে খেতে বসে তাকে মাংসও কেটে দেয় সে।


Yeman or The Yeoman - একজন দেহরক্ষী
নাইট মহোদয় শুধু একজন দেহরক্ষী সাথে এনেছে,
কারণ সে সময়ে সেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল তীর্থযাত্রার।
দেহরক্ষীটি সবুজ কোট পরা আর শিরস্ত্রাণধারী।
তার কোমরের বেল্টে আটকানো ছিল ঝকঝকে এক গোছা
ময়ূরপুচ্ছ লাগানো তীর, হাতে ছিল মজবুত ধনুক।
নিজের অস্ত্রশস্ত্রের যত্ন নিতে সে খুবই যত্নবান,
এ কারণে তার তীর হতে কখনো খসেনা ময়ূর পালক।
তামাটে গাত্রবর্ণ আর খাটো করে ছাটা চুল।
হাতের কবজিতে আটসাট করে আটা ঝকঝকে চামড়ার ব্রেসলেট,
এক পাশে তরবারি ও একটি ছোট ঢাল, অন্যপাশে বর্শার
ধারালো ফলার মতই চকচকে এক ছুরিকা।
বক্ষে ঝুলছে সন্ত ত্রিস্টোফারের রুপোর মেডেল,
হাতে তার খুলেছে সবুজ সুতোয় বাধা শিকারির শিঙা 
আমার ধারণা সে একজন নিখাদ-আদিবাসী, বুনো।



Prioresse or The Prioress - মঠের সন্ন্যাসিনী
সেথা ছিলেন একজন মঠের সন্ন্যাসিনী, মঠের কর্ত্রী
বড়ই বিনম্র সহজ সরল হাসি মাখা মুখ তার।
সেইন্ট লয়ের নামে বলছি, এটাই ছিল তার ভয়ানক অভিশাপ!
তিনি পরিচিত ছিলেন মাদা এগল্যানটাইন নামে।।
তিনি খুবই চমৎকার সুরে গাইতেন প্রার্থনাসঙ্গীত।
খুবই চমৎকার নাকি সুরে তিনি উচ্চারণ করতেন।
স্ট্রাটফোর্ড অ্যাট বো বিদ্যালয়ে প্রচলিত ফরাসি
উচ্চারণে তিনি অসাধারণ ভঙ্গিমায় ফরাসি বলতেন,
যদিও প্যারিসে প্রচলিত ফরাসি তিনি মোটেই পারেন না।
খাওয়ার টেবিলে তার শিষ্টতা উল্লেখ করার মত,
মুখ থেকে খাবারের কণা কখনো ছিটকে পড়ে না,
আচারের বয়ামে কখনো ডুবান না আঙুল 
খাবার কেমন করে খেতে হয় সেটা তার ভালো করেই জানা,
একটি টুকরোও তার বুকের উপরে ছিটকে পড়ে না।
শিষ্টতা আর ভদ্রতা প্রদর্শনে সদা সতর্ক তিনি।
এমন যত্ন করে তিনি ঠোট মোছেন তাতে কাপের
কিনারায় তার ঠোটের ছাপ পর্যন্ত পড়ে না। যখন পান করেন
খুবই অপরূপ ভঙ্গিমায় তিনি তার খাবার তুলে নেন।
তিনি ছিলেন আসলেই খুব হাসিখুশি, মনোমোহিনী প্রীতির প্রতিমা,
তিনি আচরণে খুবই আভিজাত্যপূর্ণ, আর অন্যের শ্রদ্ধা অর্জন
করার তরে তিনি রাজসভার শিষ্টাচার অনুসরণ করতেন।
এবার আসা যাক তার নৈতিকতার কথায়,
মনটা তার এতই কোমল আর দয়ায় পরিপূর্ণ যে,
ফাঁদে পড়া রক্তাক্ত কোনো মৃত ইদুর দেখেই অশ্রু ঝরত
তার চোখে। তার ছিল কয়েকটি বাচ্চা কুকুর।
তাদের দিত সে সেঁকা মাংস, দুধ আর উত্তম রুটি।
কোনো কুকুর মারা গেলে কিংবা কেউ কুকুর পিটালে
অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরত তার দু চোখ বেয়ে।
আসলেই তার হৃদয়টা ছিল বড়ই আবেগপ্রবণ আর কোমল।
তার মস্তকাবরণটি সর্বদা থাকত পরিপাটি।
খাড়া নাক, নীল দুটো চোখ, ছোট মুখখানাতে খেলা করে রক্তিম আভা।
কিন্তু তার কপালটা ছিল অসাধারণ, এক হাত চওড়া বলা যায়,
এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি এ কারণে যে
তিনি একেবারে ছোটখাটো মাপের মানুষ ছিলেন না।
আমি খেয়াল করেছি তার পোশাক বড়ই সুরুচিবান,
হাতে ধরা তার প্রার্থনাকারীদের জপমালা,
জপমালায় সবুজ রঙা বড় বড় পুতি, সেই জপমালায়
ফুলে আছে ঝকঝকে এক স্বর্ণের ব্রোচ,
সেইখানে অংকিত আছে A অক্ষরটি আর
তার নিচে লিখা 'ভালোবাসা সব জয় করতে পারে 


Nonne and 3 Preestes or The nun and Nun’s three Priests -
একজন সন্ন্যাসিনী ও তিনজন পুরোহিত
মঠের সন্নানিসীর সাথে ছিল আর একজন সন্ন্যাসিনী,
যে ছিল তার সহকারিনী; আর তার সাথে ছিল তিনজন পুরোহিত।

Monk The Monk একজন সাধু
যাত্রীদের মাঝে ছিলেন মঠের একজন অন্যতম সাধু,
মঠের যাবতীয় বিষয়-আশয় নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল তার কর্ম।
তার প্রধান শখ ছিল শিকার করা।
শারীরিক দিক থেকে সে খুবই সমর্থবান আর মঠের
প্রধান হওয়ার উপযুক্ত। বহুসংখ্যক অশ্ব
ছিল তার আস্তাবলে। তিনি যখন ঘোড়ায়
চড়ে কোথাও যাত্রা করতেন তখন
বাতাসে শন শন আওয়াজ আর চাবুকের
সপাং সপাং শব্দ ধ্বনিত হত, তিনি যে
মঠের প্রধান সেই মঠের ঘন্টাধ্বনির মতই জোরালো
ছিল সেই শব্দ। সেন্ট মোর আর সেন্ট বেনেইটে
নিয়ম কানুন কড়া থাকার কারণে তিনি পুরনো
নিয়মনীতিকে বাদ দিয়ে নতুন নিয়মনীতি অনুসরণ করতেন।
যে গ্রন্থে লেখা আছে শিকারিগণ ধর্মানুরাগী নয়
আর যে সাধু দায়িত্ববোধ সম্পন্ন নয়
সে সাধু একেবারে জলবিহীন মাছের মত
মোট কথা সে সন্ন্যাস ধর্মের বাইরের লোক,
সে গ্রন্থকে তিনি মোটেই আমল দিতেন না।
দিতেন না একটি পালক ছাড়ানো মুরগির দামও 
তিনি মনে করতেন ও গ্রন্থের মূল্য একটি ঝিনুকেরও মূল্য নয়।
আমার ধারণা তিনি সঠিক কথাই বলতেন।
মঠের নিরিবিলি কক্ষে একাকী পুথি খুলে বসে থেকে
তিনি কেনই বা পাগল হতে যাবেন? আর
সেন্ট অষ্টিনের আদেশমত তিনি দাসের কমই বা
করবেন কেন। পৃথিবীতে তা কিইবা মঙ্গল বয়ে আনবে।
সেন্ট অস্টিন তার নিজের কর্ম নিজেই সমাপন করুন।
মোট কথা এই সাধু ছিলেন একজন দক্ষ শিকারি।
তার আওতায় ছিল দ্রুতগামী পাখির মত একদল শিকারি কুকুর
শ্বারোহণ আর খরগোশ শিকারেই তিনি আনন্দ পেতেন বেশি
আর তার জন্য তিনি দুহাতে অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা করতেন না।
আমি দেখেছি তার জামার আস্তিনে দেশের সেরা
লোমের আস্তর, শিরস্ত্রাণের চিবুকের নিচে লাগানোর
জন্য তার ছিল একটি মূল্যবান স্বর্ণের পিন, সেটা
বেশ চওড়া আকৃতির, মাঝে কল্যানের চিহ্ন আঁকা।
মাথার টাকটা তার আয়নার মত চকচকে, মুখখানাও তাই।
পুরোটা শরীর তার তেল চকচকে,
বেশ মোটাসোটা সুগঠিত শরীর, ভাসা ভাসা
ঘূর্ণায়মান চোখ দুটো ঘুটের আগুনের মতই জ্বলজ্বল করে।
জুতো জোড়া তার বেশ কোমল, ঘোড়াটি বহুমূল্যবান সাজে সজ্জিত,
সম্ভবত তিনি এখন মঠের প্রধান পুরোহিত,
ন্ত্রণাকাতর প্রেতাত্মার মত তিনি ম্রিয়মাণ নন।
সব ধরনের ঝলসে যাওয়া মাংসের মাঝে হাসের মাংসটাই
তিনি বেশি পছন্দ করেন, ঘোড়াটির রংও জাম বর্ণের।


Frere or The Friar - একজন ভিক্ষু
তীর্থযাত্রী দলে ছিল খোশমেজাজের সদানন্দময়।
একজন ভিক্ষু। সে ছিল অনুমোদন পাওয়া ভিক্ষু,
কিন্তু বড়ই রসিকজন সে। চার ধরনের ভিক্ষুর
মধ্যে তার মত গল্পবাজ ভিক্ষু খুঁজে পাওয়া ভার।
নিজের গাটের টাকা খরচ করে সে অনেক স্ত্রী
লোকের স্বামীর সন্ধান করে দিয়েছে; তার
অঞ্চলের নিষ্করভোগী জমিদার এবং শহরের
সব অভিজাত রমণীদের সে ছিল খুব প্রিয় পাত্র,
আপনজনের মত। তার মুখ থেকেই জানা গেছে।
গ্রামের পুরোহিতের চেয়ে তারই কাছে পাপের
স্বীকৃতি দেয় বহু মানুষ, কারণ গির্জার প্রধান তাকে
সেই অধিকার প্রদান করেছেন।
সে খুবই উৎফুল্ল চিত্তে পাপের স্বীকৃতি শোনে।
আর তার পাপমোচন করার বিষয়টিও বেশ মজার।
যখন সে বুঝত এই স্বীকৃতিকারক তাকে দামি উপহার দেবে।
তখনি তার ব্যাপারে সহজ একটা প্রায়শ্চিত্তের বিধান দিত।
এর কারণ একজন গরিব ভিক্ষুকে কিছু দিলেই তো পাপ কেটে যায়।
সে গর্বিত স্বরে বলত, যে লোক দান-খয়রাত করে সে যে
অনুশোচনায় দন্ধ তা সে ভালো করেই জানে।
আবার অন্যদিকে এমন মানুষও আছে যারা
রীতিমত অনুতপ্ত হয়েও কাদতে পর্যন্ত পারে না।
সে কারণে অনর্থক কান্নাকাটি না করে অসহায়
দরিদ্রজনকে কিছু মোটা অর্থ দান করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
রূপসী রমণীদের দেয়ার জন্য তার টিলে পোশাকের
আড়ালে সব সময় ছুরি আর পিন গোজা থাকত।
এ ছাড়া তার গানের গলা ছিল খুবই চমৎকার,
সে গান গাওয়া আর বেহালা বাদন দুটোতেই ছিল ওস্তাদ।
চারণসঙ্গীতে সে সামনাসামনি অনেক পারিতোষিক পেয়েছে।
তার গলা শাপলা ফুলের মত সাদা হলেও
শরীরটা ছিল একজন মুষ্টিযোদ্ধার মতই সুগঠিত।
শহরের প্রতিটি ওঁড়িখানা ছিল তার নখদর্পণে।
কুষ্ঠরোগী, ভিখারিদের চাইতে সরাইখানার পরিচারিকাদের
দিকেই ছিল তার বেশি নজর। তার ধারণা
তার মত একজন লোকের কুষ্ঠরোগীদের সাথে মেশাটা বড়ই দৃষ্টিকটু 
আর এ কর্মটিও মোটেই ভালো কোনো কর্ম নয়,
আর গরিবদের সাথে বেশি মিশলে কারো উন্নতি হয় না।
তার চেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের সাথেই তার উঠাবসা করা উচিত।
আর যেখানে লাভের সুগন্ধ পাওয়া যেত, সেখানেই
এই ভিক্ষু একজন হৃদয়বান, নম্র সহায়তাকারী বনে যেত।
এ কর্মে তার মত এতটা কৌশলী আর দ্বিতীয়জন ছিল না।
তার দলের মাঝে সেই ছিল সবচেয়ে কুশলী ভিক্ষুক।
তার সহকর্মীরা ভুলেও কেউ তার অঞ্চলে যেত না।
কারণ ওদেরকে সে বেশ মোটা টাকার একটি অনুদান দিত 
যে মহিলার এক পাটি জুতো কেনার পয়সা নেই
সে রমণীও তার বাক্যে মুগ্ধ হয়ে একটি টাকা তাকে দিয়ে দিত।
এ রকম প্রতারণা করে সে তার নিয়মমাফিক রুজির চেয়ে
অনেক বেশি আয় করত। সে নাচতে পারত ঠিক পুতুলের মতই,
আর রাজসভায়ও ছিল তার যথেষ্ট খাতির, প্রতিপত্তি,
কারণ সেখানে তার যাতায়াত ছিল একজন প্রভুর মত, পোপের মত,
দরিদ্র ভিক্ষুর মত ছেড়া তালি দেয়া পোশাকে সে যেত না সেখানে।
তার পরনে সে সময় থাকত পাকানো পশমের খাটো কোট;
সেটা এতটাই পরিপাটি যে, মনে হত এক্ষুণি এটা ইস্ত্রি করা হয়েছে।
ইয়ার্কি করার সময় সে ইচ্ছেকরেই শিশুসুলভ স্বরে কথা বলত,
যাতে ইংরেজি শব্দগুলো তার কণ্ঠে মধুর শোনায়।
গান শেষ করে সে যখন তার বীণাটি বাজায়, তখন
তার চোখ দুটো কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের তারার মতই মিটমিট করে।
অনুমোদন পাওয়া এই সফল ভিক্ষুকের নাম হিউবার্ট।

Marchant - The Merchant একজন ব্যবসায়ী
দলে ছিল একজন ব্যবসায়ী, যার দাড়ি মাঝখানে কাটা।
পরনে অদ্ভূত গাউন, উচু একটি অশ্বপৃষ্ঠে আসীন।
তার মাথায় বিবরের লোমে তৈরি ফ্লেমিশ টুপি,
জুতো জোড়া খুবই সযত্নে পায়ে আটকানো।
উচ্চস্বরে সে তার নিজের মত প্রকাশ করে।
সর্বদা সে তার লাভের অঙ্ক নিয়ে আলোচনা করে।
তার একাত্ত কামনা, মিডলবার্গ থেকে অরওয়েল শহর পর্যন্ত
পুরোটা সমুদ্রপথ যে করেই হোক সদা খোলা থাকুক।
বাট্টার লেন সংক্রান্ত পয়সার বিষয়ে সে সদা সতর্ক থাকে
আর এই কুশলী মানুষটা নিজের কথা কারো কাছে প্রকাশ করে না।
লেনদেন, ধার দেনা বিষয়ে সে একেবারেই নীরব।
আর যখন সে ঋণগ্রস্ত হয় সেটা কেউ জানতে পারে না।
তবুও মানুষটা খুবই চৌকস, তবে
আসল কথাটা হল তার নামটা আমার জানা নেই।


Clerk - The Clerk of Oxford - একজন যাজক

অক্সফোর্ড হতে আসা একজন যাজকও চলেছেন আমাদের সাথে,
বহুকাল ধরে তিনি জ্ঞান সাধনায় নিয়োজিত আছেন।
তার ঘোড়াটি একেবারে কৃশকায়, হাড়জিরজিরে,
আর আমি হলফ করে বলতে পারি তিনিও খুব মোটসোটা নন।
তবে তিনি একেবারে ফাপা ও রাশভারী গোছের মানুষ।
গায়ের ওভারকোটটাও একেবারে শতছিন্ন বলা যায়,
কারণ এ যাবত তিনি কোনো দয়ালু বন্ধু পাননি।
কিংবা উচু কোনো পদে আসীন হওয়ার বৈষয়িক বুদ্ধিও নেই
তার। তার শয্যায় মাথার কাছে কোনো দামি পোশাক কিংবা
বেহালা না রেখে তিনি সেখানে লাল কভার কিংবা
কালো কভারে বাঁধানো অ্যারিস্টটলের দর্শনবিষয়ক
কুড়িটা বই সাজিয়ে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন।
তিনি একজন দার্শনিক ঠিকই কিন্তু তার বাক্সে নেই
একরত্তি সোনা, কারণ তার সুহৃদজনদের কাছ থেকে
তিনি যা কিছু পান, সবই তার ব্যয় করেন জ্ঞানচর্চায়।
আর যেসব বন্ধুজন তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার তরে অর্থ
প্রদান করে, তিনি তাদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।
মোট কথা পড়াশুনা করাটাই তার একমাত্র কর্ম।
প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই বলেন না তিনি,
যেটুকু বলেন তা বিনয়ের সাথে শুদ্ধ উচ্চারণে 
তার কথা খুবই সংক্ষেপ এবং অর্থও যুক্তিপূর্ণ
তার সকল আলোচনাই নৈতিকতাবিষয়ক,
আনন্দের সাথে তিনি সকল শিক্ষা গ্রহণ করেন।
আর শিক্ষা প্রদানও করেন আনন্দের সাথেই।


No comments:

Post a Comment

Thank you for commenting